বর্তমান সময়ে ছোট ছোট বাচ্চা বা শিশুদের সর্দি-কাশি, গলা ব্যথা বা বিভিন্ন সংক্রমণের সমস্যা দেখা দেয়। এসব ক্ষেত্রে ডাক্তাররা অনেক সময় সেফ ৩ সিরাপ (Cef-3 Syrup) খাওয়ানোর জন্য পরামর্শ দিয়ে থাকেন। সেফ-৩ একটি অ্যান্টিবায়োটিক সিরাপ। এই সিরাপ শরীরের ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ দূর করতে কার্যকর ভূমিকা রাখে।
তবে অনেক অভিভাবকই জানেন না এই সিরাপের সঠিক কাজ, কিভাবে খেতে হয়, কি ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে কিংবা এর দাম কত। তাই আজকের এই পোস্টে আমরা বিস্তারিতভাবে জানবো সেফ ৩ সিরাপের কাজ, ব্যবহার, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও দাম সম্পর্কে। যাতে ব্যবহার করার আগে সঠিক ধারণা নিতে পারেন।
সেফ ৩ সিরাপ
সেফ ৩ সিরাপ একটি জনপ্রিয় অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ। যার মূল উপাদান Cefixime Trihydrate।এটি Cephalosporin অ্যান্টিবায়োটিক শ্রেণির তৃতীয় প্রজন্মের ওষুধ। এই ওষুধ ব্যাকটেরিয়ার কোষের প্রাচীর তৈরি হতে বাধা দেয়। যার ফলে সংক্রমণ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস হয়ে যায় এবং শরীর দ্রুত সেরে ওঠে।
বাংলাদেশে Square Pharmaceuticals PLC. কোম্পানি “Cef-3” নামে সিরাপটি তৈরি ও বাজারজাত করে। যা দেশের অন্যতম বিশ্বস্ত ওষুধ ব্র্যান্ড হিসেবে পরিচিত। সাধারণত এই ওষুধটি সিরাপ বা পাউডার ফর সাসপেনশন আকারে বাজারে পাওয়া যায়। ডাক্তাররা এটি এমন ক্ষেত্রে প্রেসক্রাইব করেন যেখানে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ হয় যেমনঃ সর্দি-কাশি, গলা ব্যথা, কানের ইনফেকশন, শ্বাসনালী সংক্রমণ বা মূত্রনালীর সংক্রমণ।
সেফ ৩ সিরাপ এর কাজ কি
সেফ ৩ সিরাপ মূলত শরীরের ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট সংক্রমণ দূর করতে সাহায্য করে। এটি এমন এক ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক, যা ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলে বা তাদের বৃদ্ধি বন্ধ করে দেয়। তবে ভাইরাসজনিত রোগ, যেমন ঠান্ডা, কাশি বা ফ্লু-এর ক্ষেত্রে এই সিরাপ কোনো কাজ করে না। সাধারণত ডাক্তাররা নিচের ধরনের সংক্রমণে সেফ ৩ সিরাপ ব্যবহার করার পরামর্শ দেনঃ
- টনসিলাইটিস ও ফ্যারিংজাইটিস (Tonsillitis / Pharyngitis): গলা ব্যথা বা টনসিলে ব্যাকটেরিয়া হলে এই সিরাপ বেশ উপকার করে।
- ব্রংকাইটিস বা শ্বাসনালী সংক্রমণ: শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া বা কফ জমে গেলে এটি ভালো ফল দেয়।
- নিউমোনিয়া বা ফুসফুসের সংক্রমণ: ফুসফুসে জীবাণু সংক্রমণ হলে তা দূর করতে সাহায্য করে।
- মূত্রনালী সংক্রমণ (UTI): প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া বা ইনফেকশন কমাতে কাজ করে।
- কানের সংক্রমণ (Otitis Media): শিশুদের কানে ব্যথা বা সংক্রমণ হলে এটি বাবহারে ভালো ফল পাওয়া যায়।
চিকিৎসক প্রয়োজনে অন্য কেন ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণের জন্যও এই সিরাপ দিতে পারেন। তবে মনে রাখবেন, এটি শুধু ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট রোগের জন্যই কার্যকর।
সেফ ৩ সিরাপ খাওয়ার নিয়ম
সেফ ৩ সিরাপ খাওয়ানোর আগে অবশ্যই ডাক্তার বা ফার্মাসিস্টের পরামর্শ নেওয়া উচিত। নিচে সহজভাবে ব্যবহারের নিয়ম, মাত্রাসহ সেবনবিধি ও সতর্কতা দেওয়া হলোঃ
ব্যবহারের নিয়ম
- প্রতিবার ব্যবহারের আগে বোতলটি ভালোভাবে ঝাঁকিয়ে নিন।
- ওষুধের গুঁড়ো ও পানি ঠিকভাবে মিশাতে হবে।
- খাবারের পরে বা খাবারের সাথে খাওয়া সবচেয়ে ভালো।
- সবসময় নির্দিষ্ট মাপের চামচ বা মেজারিং কাপ ব্যবহার করুন।
মাত্রা ও সেবনবিধি
শিশুদের ক্ষেত্রে ডোজ নির্ধারণ করা হয় তাদের ওজন ও বয়স অনুযায়ী। শরীরের ওজন অনুযায়ী প্রতিদিন ৮ মিগ্রা/কেজি ডোজ দেওয়া হয়। যা একবারে বা দুই ভাগে খাওয়ানো যায়। নিচে বয়সভিত্তিক ডোজ উল্লেখ করা হলোঃ
- ৬ মাস থেকে ১ বছর: প্রতিদিন ৭৫ মি.গ্রা.।
- ১ থেকে ৪ বছর: প্রতিদিন ১০০ মি.গ্রা.।
- ৫ থেকে ১০ বছর: প্রতিদিন ২০০ মি.গ্রা.।
- ১১ থেকে ১২ বছর: প্রতিদিন ৩০০ মি.গ্রা.।
এই ডোজ একবারে অথবা দুই ভাগে (প্রতি ১২ ঘণ্টা অন্তর) খাওয়া যেতে পারে। সাধারণত এটি ৭ দিনের জন্য দেওয়া হয়, তবে সংক্রমণের ধরন অনুযায়ী কখনো কখনো ১৪ দিন পর্যন্ত ব্যবহার করা হতে পারে।
১২ বছরের ঊর্ধ্বে শিশুদের ক্ষেত্রে ডোজ প্রাপ্তবয়স্কদের মতোই নির্ধারণ করা হয়। প্রতিদিন ২০০–৪০০ মিগ্রা, যা একবারে বা দুই ভাগে খাওয়া যেতে পারে।
সতর্কতাঃ
- ওষুধের মাত্রা নিজে নিজে বাড়ানো বা কমানো যাবেনা।
- ডোজ ভুলে গেলে মনে পড়ার সাথে সাথে খেতে হবে।
- কখনোই একসাথে দুইটি ডোজ নেওয়া উচিত নয়।
- কিডনি বা লিভারের সমস্যা থেকে থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
যেকোনো ধরনের ওষুধের মতো সেফ ৩ সিরাপেও কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে। তবে এগুলো সাধারণত হালকা প্রকৃতির হয়। সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে বমি বমি ভাব, পেট ব্যথা বা ডায়রিয়া, বদহজম এবং মাঝে মাঝে মাথাব্যথা বা মাথা ঘোরা সমস্যা। এগুলো সাধারণত সাময়িক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার লক্ষণ ।
তবে খুব কম ক্ষেত্রে গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। যেমনঃ মুখ, গলা বা চোখে ফোলা, ত্বকে ফুসকুড়ি বা চুলকানি, শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া এবং অতিরিক্ত ক্লান্তি বা দুর্বলতা। যদি এই ধরনের গুরুতর প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে ওষুধ ব্যবহার বন্ধ করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
Safe 3 Syrup Price in Bangladesh
অনেকেই আছেন যারা জানতে চান সেফ ৩ সিরাপ এর দাম কত। বাংলাদেশে সেফ ৩ সিরাপ বিভিন্ন সাইজে পাওয়া যায়। জায়গা ও ফার্মেসি অনুযায়ী দাম সামান্য ভিন্ন হতে পারে। সাধারণত ৩০ মিলিলিটার সাইজের সিরাপের দাম প্রায় ৳145, ৫০ মিলিলিটার সাইজের দাম প্রায় ৳230 এবং ৭৫ মিলিলিটার সাইজের দাম প্রায় ৳260। তবে দাম সবসময় একরকম নাও থাকতে পারে। তাই কেনার আগে অবশ্যই যাচাই করে নিবেন।
আরও দেখুনঃ
Flacol 15 ml এর কাজ কি | খাওয়ার নিয়ম, সতর্কতা ও মূল্য ২০২৫
বুকের কফ বের করার সিরাপ বাংলাদেশ | কাশির সিরাপ ভালো কোনটা