বেটনোভেট এন ক্রিম সম্পর্কে অনেকেই জানেন আবার অনেকে জানতে চান। কেননা ত্বক আমাদের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাই ত্বকের যত্নে ভুল পণ্য ব্যবহার করা একদমই ঠিক নয়। বিশেষ করে উঠতি বয়সে মুখে ফুসকুড়ি, চুলকানি বা এলার্জি দেখা দেওয়া খুবই সাধারণ বিষয়। আবার বয়স বাড়ার সাথে সাথে ত্বকে মেছতা বা ছোট দাগও দেখা যায়। এসব ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শেই সঠিক চিকিৎসা নেওয়া উচিত।
অনেক সময় চিকিৎসকরা এসব সমস্যা কমানোর জন্য বেটনোভেট এন ক্রিম ব্যবহারের পরামর্শ দেন। তবে অনেকেই জানেন না এই ক্রিমটি কিভাবে ব্যবহার করতে হয় বা এর দাম কত। তাই আজকের লেখায় আমরা জেনে নেব বেটনোভেট এন ক্রিমের কাজ, ব্যবহারবিধি, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং বাংলাদেশের বাজারে বর্তমান দাম কত।
বেটনোভেট এন ক্রিম
বেটনোভেট এন ক্রিম (Betnovate-N Cream) হলো একটি জনপ্রিয় ত্বকের ক্রিম। এটি ত্বকের প্রদাহ, চুলকানি এবং হালকা ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ কমাতে সাহায্য করে। এতে দুইটি প্রধান উপাদান থাকে। একটি বেটামেথাসোন (Betamethasone), যা ত্বকের ফোলাভাব ও লালচে ভাব কমায়। দ্বিতীয়টি নিওমাইসিন (Neomycin), যা ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে ত্বককে সংক্রমণমুক্ত রাখে।
এই ক্রিম সাধারণত একজিমা, চুলকানি, অ্যালার্জি, ইনসেক্ট কামড় বা হালকা ইনফেকশন হলে ব্যবহার করা হয়। তবে এটি শুধু ত্বকের বাইরের অংশে ব্যবহারের জন্য। মুখে বা সংবেদনশীল জায়গায় এটি ব্যবহার করা ঠিক নয়। দীর্ঘ সময় ব্যবহার করলে ত্বক পাতলা হয়ে যাওয়া বা জ্বালাপোড়া হতে পারে। তাই সবসময় ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবহার করা উচিত।
বেটনোভেট এন ক্রিম বাংলাদেশ
বাংলাদেশে এই ক্রিমটি বিভিন্ন ফার্মেসি এবং অনলাইন শপে পাওয়া যায়। সাধারণত ১০ গ্রাম, ১৫ গ্রাম, ২০ গ্রাম এবং ২৫ গ্রাম টিউব আকারে থাকে। এটি একটি প্রেসক্রিপশন ওষুধ। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ব্যবহার করা যাবেনা। অনেকেই এটি সামান্য ত্বকের সমস্যা বা ফর্সা হওয়ার উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে চান। কিন্তু এটা একদমই ঠিক নয়। ভুল পদ্ধতিতে ক্রিমটি বাবহার করলে ত্বকের অনেক ক্ষতি হতে পারে। তাই নিজের মনগড়া অনুযায়ী ব্যবহার করা এড়িয়ে চলাই ভালো।
বেটনোভেট এন ক্রিম এর কাজ
বেটনোভেট এন ক্রিম ত্বকের প্রদাহ, চুলকানি ও সংক্রমণ কমাতে খুব ভালো কাজ করে। এতে থাকা বেটামেথাসোন উপাদান ত্বকের লালচেভাব, অ্যালার্জি ও ফোলাভাব কমায়। আর নিওমাইসিন ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখে। ফলে ধীরে ধীরে ত্বকের চুলকানি, ব্যথা এবং জ্বালাপোড়া কমে যায়। এই ক্রিমটি সাধারণত নিচের সমস্যাগুলোতে ব্যবহৃত হয়। যেমনঃ
- একজিমা বা ত্বকের প্রদাহ
- ডার্মাটাইটিস (ত্বক লাল বা চুলকানো)
- অ্যালার্জিজনিত জ্বালা
- ইনসেক্ট বাইট বা কামড়ের জ্বালা
- ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণজনিত ত্বক সমস্যা
তবে মনে রাখতে হবে বেটনোভেট এন ক্রিম ফাংগাল (ছত্রাক) বা ভাইরাল ইনফেকশনের ক্ষেত্রে কার্যকর নয়। তাই এসব সমস্যায় ব্যবহারের আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
বেটনোভেট এন ক্রিম ব্যবহারের নিয়ম
বেটনোভেট এন ক্রিম ব্যবহার করার সময় কিছু বিষয় খেয়াল রাখা খুব জরুরি। এতে ত্বকের সমস্যা দ্রুত কমে এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম হয়।
- ত্বক পানি দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করে শুকিয়ে নিতে হবে।
- পাতলা একটি স্তর হিসেবে ক্রিমটি লাগাতে হবে।
- অতিরিক্ত ঘন ঘন বা বেশি পরিমাণে লাগানো যাবেনা।
- সাধারণত দিনে ১–২ বার ক্রিম ব্যবহার করাই যথেষ্ট।
- মুখ ও চোখে যেন না লাগে এজন্য সতর্ক থাকতে হবে।
- সর্বদা ক্রিমটি শিশুদের নাগালের বাইরে রাখতে হবে।
- দীর্ঘদিন ব্যবহার না করে ডাক্তারের পরামর্শে ব্যবহার করতে হবে।
যদি ক্রিম ব্যবহারের পর ত্বকে অতিরিক্ত লালচেভাব, ফোলা বা জ্বালা দেখা দেয়, সঙ্গে সঙ্গে ব্যবহার বন্ধ করুন এবং ডাক্তারকে দেখান।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
বেটনোভেট এন ক্রিম সাধারণত অনেক নিরাপদ। তবে দীর্ঘমেয়াদি বা ভুলভাবে ব্যবহার করলে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। হালকা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে ত্বকে জ্বালাপোড়া ও শুষ্কতা দেখা দিতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে ত্বক পাতলা হয়ে যাওয়া বা রঙ পরিবর্তনের সমস্যা হতে পারে। গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তেমন দেখা যায়না। তবে কখনও অ্যালার্জি, ফোলা বা চুলকানি বৃদ্ধি পেতে পারে। এই ধরনের লক্ষণ দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবহার বন্ধ করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
বেটনোভেট এন ক্রিম এর দাম
বাংলাদেশে বেটনোভেট এন ক্রিমটি সাধারণত ১৫ গ্রাম, ২০ গ্রাম এবং ২৫ গ্রাম সাইজে পাওয়া যায়। বাজারভেদে দাম কিছুটা কম-বেশি হতে পারে। তবে দাম সাধারণভাবে নিচের মতো দেখা যায়। যেমনঃ
- ১০ গ্রাম টিউবের দাম: প্রায় ৳৫০–৳৬০
- ১৫ গ্রাম টিউবের দাম: প্রায় ৳৯০–৳১০০
- ২০ গ্রাম টিউবের দাম: প্রায় ৳১২০–৳১৩০
- ২৫ গ্রাম টিউবের দাম: প্রায় ৳১৪০–৳১৫০
দ্রষ্টব্যঃ দাম সময়ের সাথে পরিবর্তিত হতে পারে এবং দোকানভেদে সামান্য পার্থক্য থাকতে পারে। তাই কেনার আগে নিকটস্থ ফার্মেসিতে যাচাই করে নেওয়া ভালো।
শেষ কথা
ত্বকে যেকোনো ধরনের সমস্যা হওয়া খুব সাধারণ ব্যাপার। কিন্তু ভুল ক্রিম বা ওষুধ ব্যবহার করলে ত্বকের অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে। কারণ এটি প্রদাহ কমানোর শক্তিশালী ওষুধ, যা চিকিৎসকের নির্দেশ ছাড়া দীর্ঘদিন বা অপ্রয়োজনে ব্যবহার করা ঠিক নয়। সঠিকভাবে ব্যবহার করলে এটি ত্বকের সমস্যা দ্রুত কমায় এবং ত্বককে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনে। তাই যেকোনো ত্বকের সমস্যায় ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়াই সবচেয়ে নিরাপদ উপায়।
আরও দেখুনঃ
SunMask Cream এর কাজ কি। ব্যবহারবিধি, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও মূল্য
Antiscar Gel এর কাজ কি | ব্যবহারের নিয়ম, উপাদান ও মূল্য ২০২৫