ইন্টারনেট স্পিড কমে যাওয়ার কারণ | নেট ধীর সমস্যার সমাধান

ইন্টারনেট এখন আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। হোক সেটা অনলাইন ক্লাস, অফিস মিটিং, ভিডিও স্ট্রিমিং বা সামাজিক যোগাযোগ। দ্রুতগতির ইন্টারনেটের ওপর আমাদের নির্ভরতা এতটাই বেশি যে কখনো কখনো নেটওয়ার্ক থাকা সত্ত্বেও ইন্টারনেট স্পিড খুব ধীর হয়ে যায়, যার ফলে আমাদের স্বভাবিক কর্যক্রম অনেকটাই বন্ধ হয়ে যায়। যাকে বলা হয় ‘নিরব যন্ত্রণা’।

এই সমস্যার সম্মুখীন হননি এমন ব্যবহারকারী খুঁজে পাওয়া প্রায় অসম্ভব। তাহলে কেন এমন হয়? এর পেছনে কী কারণ থাকে? আর নিজের হাতেই কীভাবে এই সমস্যা সমাধান করা সম্ভব? এই পোস্টে আমরা ইন্টারনেট স্পিড কমে যাওয়ার প্রধান কারণগুলো নিয়ে আলোচনা করবো এবং সেগুলো সমাধানের কার্যকর উপায় জানাবো।

ইন্টারনেট স্পিড কমে যাওয়ার সাধারণ কারণ

ব্যক্তিগত ডিভাইস বা ব্যবহারের কারণে ইন্টারনেট স্পিড কমে যাওয়ার প্রধান কারণগুলো হলো:

  • রাউটারের দুর্বল অবস্থান: রাউটার যদি নিচে বা কোণায় থাকে, তাহলে সিগন্যাল দুর্বল হয়।
  • একাধিক ডিভাইস সংযুক্ত থাকা: একই নেটওয়ার্কে অনেক ডিভাইস থাকলে ব্যান্ডউইথ ভাগ হয়ে যায়।
  • পুরনো রাউটার বা মডেম: পুরনো ডিভাইস উচ্চগতির সংযোগ সাপোর্ট করতে পারে না।
  • ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাপ ও অটো আপডেট: Google Drive, Facebook ইত্যাদি নীরবে ডেটা ব্যবহার করে।
  • ভাইরাস ও ম্যালওয়্যার: ভাইরাস বা স্পাইওয়্যার ডিভাইসের ব্যান্ডউইথ গোপনে ব্যবহার করে।

ISP-এর কারণে ইন্টারনেট স্পিড কমে যাওয়া

  • ব্যান্ডউইথ সীমা অতিক্রম: নির্ধারিত ডাটা লিমিট পার হলে গতি কমিয়ে দেওয়া হয়।
  • সার্ভার সমস্যা: ISP-এর সার্ভার ডাউন থাকলে স্পিড ব্যাহত হয়।
  • স্পিড থ্রটলিং: নির্দিষ্ট সাইটে ইচ্ছাকৃতভাবে গতি সীমিত করা হয়।
  • লোকাল লাইনে সমস্যা: সংযোগে কোনো ছিঁড়ে যাওয়া বা দুর্বল সংযোগ থাকলে গতি কমে।
  • অতিরিক্ত ব্যবহারকারী: এলাকায় অনেক ইউজার থাকলে শেয়ার্ড ব্যান্ডউইথে ধীর গতি হয়।

এই সমস্যা সমাধানের জন্য আপনার ISP-এর কাস্টমার কেয়ারে যোগাযোগ করুন। প্রয়োজনে ভালো প্যাকেজে আপগ্রেড করুন বা অন্য ISP বিবেচনা করতে পারেন।

রাউটারের সঠিক অবস্থান ইন্টারনেট স্পিড বাড়াতে সাহায্য করে

রাউটার কোথায় রাখলে ইন্টারনেট স্পিড বাড়বে

ইন্টারনেট স্পিড বাড়াতে রাউটারের সঠিক অবস্থান নির্ধারণ গুরুত্বপূর্ণ। ভালো স্পিডের জন্য:

  • রাউটার ঘরের কেন্দ্রে ও উঁচু স্থানে রাখুন
  • দেয়াল বা আসবাবপত্রের কাছে রাখবেন না
  • দরকার হলে Wi-Fi রিপিটার ব্যবহার করুন

অপ্রয়োজনীয় ডিভাইস নেটওয়ার্ক থেকে সরানোর উপায়

একই নেটওয়ার্কে বেশি ডিভাইস থাকলে স্পিড কমে যায়। সমাধান:

  • ব্যবহার না করা ডিভাইস নেটওয়ার্ক থেকে বিচ্ছিন্ন করুন
  • রাউটারের MAC Filtering চালু করুন
  • Guest Network বন্ধ রাখুন

ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাপ ও অটো আপডেট বন্ধ করার পদ্ধতি

ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাপ ও অটো আপডেট নীরবে ডেটা খরচ করে এবং স্পিড কমায়।

সমাধান:

  • অটো আপডেট বন্ধ করুন
  • ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাপের ডেটা ব্যবহার সীমিত করুন
  • অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ রিমুভ করুন
মোবাইলে ব্যাকগ্রাউন্ড ডেটা বন্ধ করার সেটিংস স্ক্রিনশট

মোবাইলের জন্য

  • Settings > Data Usage > Restrict Background Data-তে গিয়ে অপ্রয়োজনীয় অ্যাপের ব্যাকগ্রাউন্ড ডেটা ব্যবহার বন্ধ করুন
  • Play Store-এর অটো আপডেট অপশন বন্ধ রাখুন, বিশেষ করে যখন ইন্টারনেটের স্পিড কম থাকে

পিসির জন্য

  • Task Manager থেকে অপ্রয়োজনীয় সফটওয়্যার বন্ধ করুন, যা ব্যান্ডউইথ খরচ করছে
  • Windows Update সাময়িকভাবে পজ করুন, যাতে বড় আপডেট ডাউনলোড চলাকালীন স্পিড কমে না যায়

মোবাইলে ইন্টারনেট স্পীড বেশী করার নিয়ম

অনেকেই মোবাইলে ধীরগতির ইন্টারনেট নিয়ে সমস্যায় পড়েন। নিচের সহজ টিপসগুলো অনুসরণ করলে আপনি মোবাইলে ইন্টারনেট স্পিড কিছুটা হলেও বাড়াতে পারবেন।

সঠিক নেটওয়ার্ক ও SIM Slot ব্যবহার করুন

  • 4G বা 5G নেটওয়ার্ক কাভারেজ রয়েছে এমন এলাকা বেছে নিন
  • আপনার ফোনের যে SIM Slot-এ বেশি স্পিড পাওয়া যায় (সাধারণত SIM 1), সেটি ব্যবহার করুন
  • Settings > Mobile Network থেকে Network Mode সেট করুন: 4G/Preferred

Lite অ্যাপ ও Data Saver ব্যবহার করুন

  • Facebook Lite, Messenger Lite, YouTube Go এর মতো লাইট অ্যাপ ব্যবহার করুন, যেগুলো কম ডেটা খরচ করে
  • Chrome-এর Data Saver (Lite Mode) অপশন চালু রাখলে ব্রাউজিংয়ে ডেটা সাশ্রয় হয়
  • দরকারে অপ্রয়োজনীয় অ্যাপের ব্যাকগ্রাউন্ড ডেটা বন্ধ রাখুন

এই সহজ পদ্ধতিগুলো মোবাইলে ইন্টারনেট স্পিড উন্নত করতে বাস্তবে অনেক কার্যকর।

জনপ্রিয় ৪ টি ISP কোম্পানির লোগোসহ নাম

ইন্টারনেট স্পিড কিভাবে টেস্ট করবেন?

আপনার ইন্টারনেট স্পিড ঠিক আছে কিনা বুঝতে নিয়মিত স্পিড টেস্ট করা জরুরি। নিচে সহজ কিছু উপায় দেওয়া হলো:

  • Speedtest.net বা Fast.com এর মতো ওয়েবসাইট বা অ্যাপ ব্যবহার করুন।
  • সকাল, দুপুর ও রাতে আলাদা সময়ে টেস্ট করে গড় স্পিড বের করুন।
  • Ping, Download ও Upload স্পিড খেয়াল রাখুন।

ISP পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত কিভাবে নিবেন?

বারবার ইন্টারনেট সমস্যা হলে ভালো ISP নির্বাচন করাও গুরুত্বপূর্ণ:

  • বেশি লোডিং টাইম বা ডিসকানেকশন হলে কাস্টমার কেয়ারকে জানান।
  • সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হলে নতুন ISP নেওয়ার কথা ভাবুন।
  • আপনার এলাকায় ভালো রিভিউ পাওয়া ISP বেছে নিন।

বাংলাদেশের জনপ্রিয় ISP গুলো কোনগুলো?

  • Link3
  • Carnival Internet
  • Amber IT
  • Teletalk 4G (মোবাইল নেটওয়ার্ক)

পরিশেষে

ইন্টারনেট স্পিড কমে যাওয়া অবশ্যই বিরক্তিকর, তবে সহজ কিছু পদক্ষেপে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব। সঠিকভাবে রাউটার বসানো, অপ্রয়োজনীয় ডিভাইস ডিসকানেক্ট করা, ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাপ নিয়ন্ত্রণ, DNS পরিবর্তন ও LAN ব্যবহারের মাধ্যমে স্পিড বাড়ানো যায়। নিয়মিত স্পিড টেস্ট করুন এবং বারবার সমস্যা হলে ভালো কোনো ISP নির্বাচন করুন। একটু সচেতন হলেই আপনি আগের চেয়ে দ্রুত ও নিরবিচারে ইন্টারনেট উপভোগ করতে পারবেন।

 

আরও দেখুন :

ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ ২০২৫ | ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ কী

ইন্টারনেটের জনক কে? জানুন ইতিহাস ও বিজ্ঞানীদের গল্প

ইন্টারনেট কি? সহজ ভাষায় ইন্টারনেটের ধারণা ও ব্যবহার

রাউটার কি? কাজ ও ব্যবহার সহজ ভাষায় জানুন

বাংলাদেশে রাউটার দাম ২০২৫ | কোন Wi‑Fi রাউটারটি আপনার জন্য সেরা?

 

 

 

 

Leave a Comment