সিলিন্ডারে কত কেজি গ্যাস থাকে? এক ঘনমিটারে কত গ্যাস থাকে

গ্যাস সিলিন্ডার এখন আমাদের দৈনন্দিন জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে। ঘরে রান্নাবান্না থেকে শুরু করে দোকান, হোটেল বা নানা সামাজিক কাজেও এর ব্যবহার হয় নিয়মিত। কিন্তু এখনো অনেকেই জানেন না, একটি সিলিন্ডারে আসলে কত কেজি গ্যাস থাকে, কিংবা এক ঘনমিটারে কতটা গ্যাস হিসাব করা হয়। অনেক সময় গ্যাস শেষ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় হঠাৎ করে বিপদে পড়তে হয়। অথচ এই তথ্যগুলো আগেই জানা থাকলে ব্যবহার ও খরচ দুটো নিয়েই সচেতন থাকা যায়। এই পোস্টে আমরা খুব সহজভাবে জানবো গ্যাস সিলিন্ডার নিয়ে দরকারি কিছু তথ্য, হিসাব ও ব্যবহার পদ্ধতি।

গ্যাস সিলিন্ডার সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

গ্যাস সিলিন্ডার শুধু রান্নার কাজে নয়, নানা ধরনের কাজেই ব্যবহার হয়। আমাদের ঘরোয়া সিলিন্ডারে মূলত থাকে এলপিজি (LPG), যা প্রোপেন ও বিউটেন মিশ্রিত এক ধরনের তরল গ্যাস। নিচে গ্যাস সিলিন্ডার সম্পর্কে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেওয়া হলো।

  • গ্যাস সিলিন্ডারে থাকে এলপিজি (LPG) এতে প্রোপেন ও বিউটেন গ্যাসের মিশ্রণ থাকে।
  • সিলিন্ডারের ভেতরে গ্যাস তরল অবস্থায় থাকে এবং ব্যবহারের সময় এটি গ্যাসে রূপ নেয়।
  • গ্যাসের পরিমাণ সাধারণত কেজি ও লিটার এই দুই ধরনের পরিমাপ এককে মাপা হয়।
  • একটি পরিবারের জন্য সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় ১২ কেজি এলপিজি সিলিন্ডার।

বাংলাদেশে কোন কোন সাইজের গ্যাস সিলিন্ডার পাওয়া যায়?

বাংলাদেশে বিভিন্ন মাপের গ্যাস সিলিন্ডার বাজারে পাওয়া যায়, যা ব্যবহারের ধরন অনুযায়ী আলাদা হয়ে থাকে। নিচে সিলিন্ডারের ধরন, গ্যাসের পরিমাণ ও ব্যবহার ক্ষেত্রের একটি তালিকা দেওয়া হলো:

সিলিন্ডার ধরন গ্যাস পরিমাণ (কেজি) ব্যবহারের ক্ষেত্র
ছোট সাইজ ৫ কেজি ব্যাচেলর রুম, ছোট দোকান
মাঝারি সাইজ ১২ কেজি বাসা-বাড়ির রান্নায়
বড় সাইজ ১৪.২ – ১৫ কেজি হোটেল, রেস্টুরেন্ট

 

সাধারণত পরিবারের রান্নার জন্য ১২ কেজি ওজনের গ্যাস সিলিন্ডার সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

১২ কেজি গ্যাসে কত লিটার গ্যাস থাকে?

এলপিজি গ্যাসের পরিমাণ সাধারণত কেজিতে দেওয়া হয়, কিন্তু অনেকেই জানতে চান এতে আসলে কত লিটার গ্যাস থাকে?

সাধারণভাবে ধরা হয়:
১ কেজি এলপিজি = প্রায় ১.৯৬ লিটার তরল গ্যাস

তাহলে,
১২ কেজি × ১.৯৬ লিটার = ২৩.৫২ লিটার

অর্থাৎ, একটি ১২ কেজির গ্যাস সিলিন্ডারে প্রায় ২৩.৫ লিটার এলপিজি গ্যাস থাকে।

এই হিসাব থেকে আাপনি সহজেই বুঝতে পারবেন দৈনন্দিন ব্যবহারে কতটুকু গ্যাস খরচ করছেন এবং কতদিন চলবে তা আগেভাগেই ধারণা নিতে পারবেন।

১ ঘনমিটারে কত কেজি গ্যাস থাকে?

এলপিজি গ্যাস সাধারনত গ্যাসীয় অবস্থায় থাকে, আর এই গ্যাস মাপা হয় ঘনমিটার (m³) এককে। এই পরিমাপ মূলত টেকনিক্যাল হিসাব বা শিল্পক্ষেত্রে বেশি ব্যবহার করা হয়। অনেকে জানতে চান ১ ঘনমিটার গ্যাসে আসলে কত কেজি এলপিজি থাকে?

গড় হিসেবে ধরা হয়:

(১ ঘনমিটার এলপিজি ≈ ১.৮ কেজি)

তাহলে নিচের টেবিল থেকে আপনি সহজেই অনুমান করতে পারবেন বিভিন্ন ঘনমিটার অনুযায়ী কত কেজি গ্যাস হয়:

ঘনমিটার (m³) আনুমানিক কেজি (kg)
১ m³ ১.৮ কেজি
২ m³ ৩.৬ কেজি
৫ m³ ৯ কেজি
১০ m³ ১৮ কেজি
১৫ m³ ২৭ কেজি

 

বি.দ্র: এই হিসাবটি প্রোপেন ও বিউটেন গ্যাসের গড় ঘনত্ব অনুসারে করা হয়েছে। প্রকৃত পরিমাণ তাপমাত্রা ও চাপের ওপর কিছুটা নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে।

গ্যাস সিলিন্ডারের মোট ওজন ও খালি ওজন কত?

গ্যাস সিলিন্ডারের ওজন বলতে আমরা সাধারণত দু’টি বিষয় বুঝি একটি হলো খালি সিলিন্ডারের ওজন (যাকে ট্যার ওজন বলা হয়), আরেকটি হলো সিলিন্ডারে গ্যাস ভরা অবস্থায় মোট ওজন।

সহজভাবে হিসাব করলে:

মোট ওজন = খালি সিলিন্ডারের ওজন + গ্যাসের ওজন

উদাহরণস্বরূপ:

খালি সিলিন্ডার: ১৫ কেজি

গ্যাস: ১২ কেজি

তাহলে মোট ওজন: ১৫ + ১২ = ২৭ কেজি

ট্যার ওজন (Tare Weight) কী?

সিলিন্ডারের গায়ে সাধারণত একটি “T” দিয়ে শুরু হওয়া সংখ্যা লেখা থাকে, যেমন: T: 15.2 kg

এটি বোঝায়, সিলিন্ডারটি খালি অবস্থায় ঠিক কত কেজি ওজন আছে। এই ওজনটি জেনে আপনি সহজেই মোট ওজন থেকে গ্যাসের প্রকৃত ওজন হিসাব করতে পারবেন।

উদাহরণ:

যদি মোট ওজন হয় ২৭ কেজি এবং ট্যার ওজন হয় ১৫.২ কেজি, তাহলে গ্যাস আছে:

২৭ – ১৫.২ = ১১.৮ কেজি (প্রায়)

কিভাবে বুঝবেন সিলিন্ডারে কতটুকু গ্যাস আছে?

অনেক সময় রান্না করার মাঝখানে হঠাৎ গ্যাস শেষ হয়ে যায়, যা আসলেই অনেক বিরক্তিকর লাগে। তাই আগেই বুঝে রাখা ভালো সিলিন্ডারে আর কতটুকু গ্যাস আছে। নিচে কিছু সহজ ও কার্যকর পদ্ধতি দেওয়া হলো, যেগুলো ব্যবহার করে আপনি নিজেই গ্যাসের পরিমাণ আন্দাজ করে নিতে পারবেন।

ওজন করে মাপা

সিলিন্ডারের মোট ওজন একটি দাঁড়িপাল্লা বা ওয়েট স্কেলে মাপুন। এরপর সিলিন্ডারের গায়ে লেখা Tare Weight (T) বা খালি ওজন বাদ দিন।

যেমন: মোট ওজন ২৬.৫ কেজি, ট্যার ওজন ১৫.২ কেজি হলে, গ্যাস আছে: ১১.৩ কেজি (প্রায়)

গরম পানি পদ্ধতি

একটি গামলার মধ্যে হালকা গরম পানি নিন। সিলিন্ডারের উপরের অংশে সেই পানি ঢালুন। কিছুক্ষণ পর হাত দিয়ে স্পর্শ করুন যেই অংশে ঠাণ্ডা অনুভব হবে সেখান পর্যন্ত গ্যাস আছে। এটা গ্যাসের স্তর বোঝার জন্য খুব সহজ ঘরোয়া পদ্ধতি।

গ্যাস গেজ ব্যবহার

কিছু সিলিন্ডারে বিল্ট-ইন গেজ থাকে যা গ্যাসের পরিমাণ দেখায়। আপনি চাইলে বাজার থেকে আলাদা গ্যাস লেভেল গেজ কিনে লাগিয়ে নিতে পারেন। এটি সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি।

এই পদ্ধতিগুলোর যেকোনো একটি ব্যবহার করলেই আপনি জানতে পারবেন সিলিন্ডারে কতটুকু গ্যাস বাকি আছে। ফলে আগেভাগেই গ্যাস শেষ হওয়ার প্রস্তুতি নিতে পারবেন।

একটি গ্যাস সিলিন্ডার কতদিন চলে?

সাধারণত একটি ১২ কেজির গ্যাস সিলিন্ডার প্রতিদিন ১ ঘণ্টা রান্নার কাজে ব্যবহার করলে গড়ে ২৮–৩০ দিন পর্যন্ত চলে। তবে সঠিক সময়টা কিছু বিষয় অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে।

নিচে গ্যাস খরচ নির্ভর করে এমন ৫টি মূল বিষয় তুলে ধরা হলো:

  • চুলার সংখ্যা বেশি হলে গ্যাস দ্রুত শেষ হয়।
  • একাধিক বার রান্না করলে গ্যাস খরচ বাড়ে।
  • চুলার আঁচ বেশি থাকলে গ্যাস বেশি খরচ হয়।
  • রান্নার সময় যত দীর্ঘ হবে, গ্যাস তত কমবে।
  • রান্নায় ব্যবহৃত পাত্রের আকারেও প্রভাব পড়ে।

এই বিষয়গুলোর ওপর ভালোভাবে নজর রাখলে আপনি গ্যাস ব্যবহারে আরও সচেতন হতে পারবেন এবং কতদিন চলবে তা সহজেই বুঝতে পারবেন।

গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারের নিরাপদ উপায়

গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারের ক্ষেত্রে সামান্য একটু অসতর্কতা থেকেও বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিচের নিয়মগুলো অবশ্যই অনুসরণ করুন:

  • রান্না শেষ হলে গ্যাসের ভালভ ভালোভাবে বন্ধ করুন
  • চুলা ও পাইপের সংযোগ বছরে অন্তত একবার পরীক্ষা করুন
  • গ্যাস লিক হলে কখনোই আগুন বা ইলেকট্রিক জ্বালাবেন না
  • বাড়ির জানালা-দরজা খুলে বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা করুন
  •  বাসায় সবসময় ফায়ার এক্সটিংগুইশার রাখার চেষ্টা করুন

এই নিরাপত্তা টিপসগুলো মেনে চললেই গ্যাস ব্যবহার অনেক বেশি নির্ভরযোগ্য ও ঝুঁকিমুক্ত হবে।

শেষ কথা

একটি গ্যাস সিলিন্ডারে কত কেজি বা লিটার গ্যাস থাকে, কিংবা এক ঘনমিটারে কতটা গ্যাস পাওয়া যায় এই তথ্যগুলো জানা থাকলে গ্যাস আরও সচেতনভাবে ব্যবহার করতে পারবেন । আশা করি এই পোস্ট থেকে আপনি সহজ ভাষায় প্রয়োজনীয় তথ্য পেয়ে গেছেন। কোনো প্রশ্ন থাকলে নিচে মন্তব্য করে জানাতে পারেন, ইনশাআল্লাহ দ্রুত  উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব।

Leave a Comment