কলা এমন একটি ফল যা প্রায় সবার কাছেই খুব প্রিয়। কলা শুধু খেতেই সুস্বাদু নয় এটি শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারীও বটে। তাইতো অনেকেই কলা খাওয়ার উপকারিতা জানতে আগ্রহী। কেননা আমাদের দেশে কলা সারা বছরই পাওয়া যায়। তাই এটি সহজলভ্য ফলগুলোর মধ্যে অন্যতম। যদিও এখন এর দাম কিছুটা বেড়েছে, তবুও কলার চাহিদা কমেনি।
প্রতিদিন একটি করে কলা খেলে শরীরে শক্তি বাড়ে, ক্লান্তি কমে এবং শরীর অনেক সতেজ থাকে। তাই কলা খাওয়ার উপকারিতা জানা এবং এটি খাদ্যতালিকায় রাখা উচিত। আজকের লেখায় আমরা জানবো কলার পুষ্টিগুণ, কলা খাওয়ার উপকারিতা এবং অতিরিক্ত কলা খাওয়ার কিছু অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।
কলার পুষ্টিগুণ
কলা শুধু একটি ফল নয়, এটি শরীরের জন্য প্রাকৃতিক পুষ্টির ভাণ্ডার। একটি মাঝারি বা স্বাভাবিক আকারের কলায় ক্যালরি থাকে প্রায় ১০৫ ক্যালরি। যার মধ্যে কার্বোহাইড্রেট আছে প্রায় ২৭ গ্রাম, ফাইবার বা আঁশ থাকে ৩ গ্রাম, ১ গ্রাম প্রোটিন এবং প্রায় ১৪ গ্রাম প্রাকৃতিক চিনি। এছাড়াও এতে রয়েছে শরীরের জন্য অত্যন্ত দরকারি ভিটামিন বি৬, ভিটামিন সি, এবং পটাশিয়াম। তাই সকালের নাস্তা বা বিকেলের হালকা খাবারের অংশ হিসেবে কলা হতে পারে স্বাস্থ্যকর একটি বিকল্প।
নিয়মিত কলা খাওয়ার উপকারিতা
নিয়মিত কলা খেলে শরীরে অসংখ্য উপকার পাওয়া যায়। নিচে কলা খাওয়ার কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা সিরিয়াল আকারে তুলে ধরা হলোঃ
১.হার্ট সমস্যার ঝুঁকি কমায়
কলায় প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়াম থাকে। এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। নিয়মিত কলা খেলে রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে। এতে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেক কমে যায়।
২. হজম শক্তি বৃদ্ধি করে
কলার ভিতরে থাকা ফাইবার হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে। নিয়মিত কলা খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা কমে যায় এবং পরিপাকতন্ত্রকে সঠিকভাবে কাজ করতে সহায়তা করে।
৩.শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করে
কলায় থাকা প্রাকৃতিক চিনি ও কার্বোহাইড্রেট শরীরে দ্রুত শক্তি যোগায়। ব্যায়ামের আগে বা পরে কলা খেলে শক্তি বাড়ে। তাই অনেকেই কলাকে ‘প্রকৃতির এনার্জি বার’ বলে অভিহিত করে থাকেন।
৪.মস্তিস্ক ভালো রাখে
কলায় থাকা ট্রিপটোফ্যান মস্তিষ্কে সেরোটোনিন হরমোন উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়। এই হরমোন মনকে ভালো রাখতে সাহায্য করে। এতে মানসিক চাপ ও একাকীত্ব কমে যায়।
৫.ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক
কলায় ক্যালোরি কম থাকে এবং ফাইবার বেশি থাকে। তাই কলা খেলে পেট দ্রুত ভরে যায় এবং অতিরিক্ত ক্ষুধা কমে যায়। এতে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে বা নিয়ন্ত্রণ সহজ হয়।
৬.ত্বকের যত্নে কলা খাওয়ার উপকারিতা
কলার ভিতরে ভিটামিন সি থাকে। এই ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়। মাখন হিসেবে ব্যবহার করলে ত্বক মসৃণ ও নরম হয়।
৭.স্মৃতিশক্তি বাড়ায়
কলায় থাকা ভিটামিন ‘বি’৬ ও ম্যাগনেসিয়াম মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ায়। যার ফলে স্মৃতিশক্তি উন্নত হয়। এতে পড়াশোনা বা মানসিক কাজে মনোযোগ অনেক বেড়ে যায়।
৮.চুলের যত্নে কার্যকর
কলা দিয়ে পেস্ট বানিয়ে চুলে লাগালে চুল অনেক মসৃণ ও উজ্জ্বল হয়। পটাশিয়াম ও ভিটামিন চুলের গোড়াকে মজবুত করে। যার কারণে চুল বৃদ্ধির পরিমাণ আগের তুলনায় অনেকটাই বেড়ে যায়।
৯.কিডনি সুস্থ রাখে
কিডনি মানুষের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর মধ্যে একটি। সুস্থ থাকতে এটি খুবই জরুরি। তাইতো কলায় থাকা পর্যাপ্ত পটাশিয়াম কিডনির কার্যকারিতা বাড়ায় এবং কিডনি রোগের ঝুঁকি কমায়।
১০.হাড়ের শক্তি বাড়ায়
কলায় থাকা ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম হাড়ের শক্তি বৃদ্ধি করে। নিয়মিত কলা খেলে অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি কমে। এতে হাড়ের গঠন ভালো এবং শক্ত হয়।
সকালে কলা খাওয়ার উপকারিতা
সকালে কলা খাওয়া দিন শুরু করার এক দারুণ উপায় হতে পারে। কেননা, এতে থাকা প্রাকৃতিক চিনি ও কার্বোহাইড্রেট শরীরে দ্রুত শক্তি জোগায়। ফলে সারাদিন কাজ করার এনার্জি বজায় থাকে। কলায় থাকা ফাইবার দীর্ঘ সময় পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে। যার ফলে অতিরিক্ত খাবারের প্রবণতা কমে যায়। তবে মনে রাখতে হবে, একদম খালি পেটে কলা খাওয়া ঠিক নয়। কারণ এতে থাকা ম্যাগনেসিয়াম কখনো কখনো পেটে হালকা অস্বস্তি বা অম্লতা সৃষ্টি করতে পারে। তাই হালকা কিছু খাবারের পর কলা খাওয়াই সবচেয়ে ভালো।
রাতে কলা খাওয়ার উপকারিতা
অনেকে মনে করেন রাতে কলা খেলে ঠান্ডা লেগে যেতে পারে। কিন্তু আসলে পরিমাণ বুঝে খেলে এটি বেশ উপকারী একটি ফল। রাতে ঘুমানোর আগে একটি কলা খেলে শরীরে সেরোটোনিন ও মেলাটোনিন নামের দুটি হরমোনের নিঃসরণ বেড়ে যায়। এর ফলে ঘুম অনেক গভীর হয় এবং শরীরকে প্রশান্ত করে তোলে। তাই যাদের ঘুমের সমস্যা আছে তারা ঘুমানোর এক ঘণ্টা আগে একটি কলা খেতে পারেন।
এছাড়া কলা শরীরের পেশীর টান ও ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। বিশেষ করে যারা সারাদিন শারীরিক পরিশ্রম করেন তাদের জন্য এটি বেশ কার্যকর। রাতে কলা খাওয়া হজম প্রক্রিয়াকেও সহজ করে তুলে। ফলে সকালে পেট পরিষ্কার থাকে ও অস্বস্তি হয় না। তবে যাদের সাইনাস বা ঠান্ডাজনিত সমস্যা আছে, তাদের রাতে কলা খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়াই ভালো।
পাকা কলা খাওয়ার উপকারিতা
পাকা কলা খাওয়ার উপকারিতা সবথেকে বেশি থাকে। পাকা কলা হজমে সহজ এবং শরীরে দ্রুত শক্তি জোগায়। বিশেষ করে যারা দুর্বল বা অসুস্থ, তাদের জন্য এটি একটি আদর্শ ফল। পাকা কলায় থাকা প্রাকৃতিক চিনি যেমন ফ্রুক্টোজ, গ্লুকোজ এবং সুক্রোজ শরীরে তাৎক্ষণিক শক্তি প্রদান করে। নিয়মিত পাকা কলা খেলে রক্তস্বল্পতার সমস্যা দূর হয়। পাকা কলা খেলে পেটের সমস্যাগুলো কমে যায় এবং বাচ্চাদের জন্য এটি খুবই উপকারী। তাছাড়া পাকা কলা ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতেও সাহায্য করে।
কলা খাওয়ার অপকারিতা
কলা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। তবুও অতিরিক্ত খেলে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। বেশি কলা খেলে গ্যাস বা পেট ফাঁপাভাব হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে হজমে সমস্যা বা পেটের ব্যথা দেখা দিতে পারে। কলাতে প্রাকৃতিক চিনি অনেক বেশি থাকে। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বেশি কলা খাওয়া ক্ষতিকর হতে পারে। এছাড়া রাতে অতিরিক্ত কলা খেলে ঠান্ডা বা কাশির সমস্যাও দেখা দিতে পারে। এজন্য প্রতিদিন ১–২ টি কলা খাওয়াই শরীরের জন্য যথেষ্ট।
আরও দেখুনঃ