তরমুজ একটি পানিজাতীয় ফল। তরমুজের মধ্যে রয়েছে ঠান্ডা ভাব ও অসাধারণ সতেজতা। আর পানিজাতীয় ফলের মধ্যে তরমুজ খাওয়ার উপকারিতা সবচেয়ে বেশি বলে মনে করা হয়। তরমুজ সাধারণত আকারে বড় হয় এবং এর বাইরের দিকটি সাদা বা সবুজ রঙের। ভিতরের অংশটা থাকে টকটকে লাল, রসালো ও মিষ্টি স্বাদের। তবে কখনও কখনও ভিতরটা সাদা বা হালকা রঙের হতে পারে। এই রঙের তরমুজ পরিপক্কতার অভাব নির্দেশ করে। এমন তরমুজ দেখতে কম আকর্ষণীয় এবং খেতেও তেমন সুস্বাদু নয়। তাই তরমুজ কেনার সময় ভালোভাবে বেছে নেওয়া জরুরি। আজকের এই লেখায় আমরা বিস্তারিত জানবো তরমুজ খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা, সাথে থাকছে পুষ্টিগুণ ও বিশেষ পরিস্থিতিতে এর ভূমিকা সম্পর্কে বাস্তব তথ্য।
তরমুজের পুষ্টিগুণ
তরমুজ এমন একটি ফল, যার প্রায় ৯০–৯২% জল। ফলে এটি শরীরকে দ্রুত ঠান্ডা রাখে ও পানিশূন্যতা দূর করতে সাহায্য করে। প্রতি ১০০ গ্রাম তরমুজে ক্যালরি থাকে প্রায় ৩০ ক্যালোরি, অল্প পরিমাণ প্রোটিন, এবং প্রায় শূন্য পরিমাণ ফ্যাট। এতে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন ও মিনারেলস যেমনঃ
- ভিটামিন A – চোখের জন্য উপকারী
- ভিটামিন B – ত্বকের জন্য উপকারী
- ভিটামিন C – রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
- পটাসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম – রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে
- লাইকোপিন ও সিট্রুলিন – শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে
তাই বলা যায়, তরমুজ হলো শরীর ঠান্ডা রাখার পাশাপাশি পুষ্টি সরবরাহের এক চমৎকার উৎস।
তরমুজ এর উপকারিতা
প্রতিটি ফলেরই নিজস্ব পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা রয়েছে। ঠিক তেমনি তরমুজও এক অনন্য ফল। এটি শরীরকে শীতল রাখার পাশাপাশি অসংখ্য স্বাস্থ্য উপকারিতা দেয়। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ পানি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন ও মিনারেল। এই উপাদানগুলো শরীরের বিভিন্ন প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণে সাহায্য করে। নিয়মিত তরমুজ খেলে শরীরে পানিশূন্যতা দূর হয়, ত্বক উজ্জ্বল থাকে এবং হজম প্রক্রিয়াও উন্নত হয়। নিচে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে তরমুজের কিছু বিশেষ উপকারিতা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলোঃ
গরমে তরমুজ খাওয়ার উপকারিতা
গরমের দিনে রোদ ও ঘামের কারণে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি বেরিয়ে যায়। এই সময় তরমুজ খেলে শরীরের পানিশূন্যতা অনেক কমে যায়। কারণ তরমুজের প্রায় ৯০ শতাংশই জল। এতে শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা বজায় থাকে। তরমুজে থাকা প্রাকৃতিক চিনি শরীরে দ্রুত শক্তি জোগায়। যার ফলে ক্লান্তি দূর হয়ে শরীরে সতেজ অনুভূত হয়। তরমুজে থাকা লাইকোপিন ও ভিটামিন C ত্বককে সজীব ও উজ্জ্বল রাখে, যা গ্রীষ্মের রোদে ত্বককে রক্ষা করে। তাই গরমে এক টুকরো ঠান্ডা তরমুজ শুধু শরীর ঠান্ডা রাখে না, বরং তাৎক্ষণিক এনার্জি ও ত্বকের উজ্জ্বলতাও ফিরিয়ে আনে।
ইফতারে তরমুজের উপকারিতা
রোজার দিনে বা রমজান মাসে সারাদিন না খেয়ে থাকার কারণে শরীরে পানির ঘাটতি দেখা দেয়। কিন্তু ইফতারে তরমুজ খেলে সেই ঘাটতি দ্রুত পূরণ হয় এবং শরীরকে শীতল করে। রোজার শেষে তরমুজ খেলে ক্লান্তি দূর হয় এবং শরীরকে সতেজ করে তোলে। এছাড়া এতে থাকা প্রাকৃতিক ফাইবার হজমশক্তি বৃদ্ধি করে। ভারি খাবার খাওয়ার পর হজমে সাহায্য করে। সবচেয়ে ভালো বিষয় হচ্ছে তরমুজে ক্যালোরি খুব কম থাকে। তাই ইফতারের পর মিষ্টি কিছু খেতে চাইলে তরমুজ হতে পারে একদম ঝুঁকিমুক্ত ও স্বাস্থ্যকর বিকল্প। নিয়মিত ইফতারে তরমুজ রাখলে শরীর যেমন সতেজ থাকবে, তেমনি অতিরিক্ত ক্যালোরির ভয়ও থাকবে না।
গর্ভাবস্থায় তরমুজ খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় বাচ্চাকে সুস্থ রাখতে একজন মায়ের শরীরে পর্যাপ্ত জল ও পুষ্টির সরবরাহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তরমুজে থাকা উচ্চমাত্রার পানি গর্ভবতী মায়ের শরীরের হাইড্রেশন বজায় রাখতে সাহায্য করে। গর্ভাবস্থার বমি বমি ভাব বা অম্বল হওয়া সাধারণ সমস্যা হিসেবে দেখা যায়। তবে তরমুজে থাকা প্রাকৃতিক শীতলতা অম্বল ও বমি ভাব কমাতে ভূমিকা রাখে। পাশাপাশি তরমুজে থাকা ভিটামিন C শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। গর্ভাবস্থায় তরমুজ মায়ের সাথে শিশুর ইমিউন সিস্টেমকেও শক্তিশালী করে। তবে যদি কারও রক্তে শর্করার মাত্রা বেশি থাকে, তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে তরমুজ খাওয়াই সবচেয়ে নিরাপদ উপায়।
তরমুজের বিচি খাওয়ার উপকারিতা
আমাদের অনেকেরই অভ্যাস আছে তরমুজ খাওয়ার সময় এর বিচিগুলো ফেলে দেওয়ার। কিন্তু আপনি জানলে অবাক হবেন এই ছোট ছোট বীজগুলোর মধ্যেই রয়েছে অসাধারণ কিছু পুষ্টিগুণ। তরমুজের বিচিতে থাকে ম্যাগনেসিয়াম ও জিংক। এগুলো হৃদপিণ্ডের কার্যক্ষমতা ও হাড়ের গঠন মজবুত রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া এতে থাকা প্রোটিন ও স্বাস্থ্যকর ফ্যাট শরীরে শক্তি জোগায় এবং কোষের বৃদ্ধি ও পুনর্গঠনে সহায়তা করে। তরমুজের বিচি শুকিয়ে বা হালকা ভেজে খাওয়া যায়। এটি একদিকে যেমন সুস্বাদু, অন্যদিকে দারুণ একটি স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস হিসেবেও কাজ করে। তবে মনে রাখতে হবে একসাথে বেশি বিচি না খাওয়াই ভালো। কারণ অতিরিক্ত খেলে হজমে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
তরমুজ খাওয়ার অপকারিতা
তরমুজ সাধারণত একটি স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর ফল। তবুও কিছু নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে এটি খাওয়ার সময় সতর্ক থাকা জরুরি। কারণ অতিরিক্ত পরিমাণে তরমুজ খেলে শরীরে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। যেমনঃ
প্রথমত, তরমুজে থাকা ফ্রুকটোজ ও অতিরিক্ত জল একসাথে শরীরে গেলে গ্যাস ও ডায়রিয়া হতে পারে। বিশেষ করে যাদের হজমে সমস্যা আছে তাদের জন্য এটি অস্বস্তিকর হতে পারে। দ্বিতীয়ত, ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য তরমুজ সীমিত পরিমানে খাওয়া উচিত। কারণ এর গ্লাইসেমিক ইনডেক্স তুলনামূলক বেশি, এটি রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ বাড়িয়ে দিতে পারে।
এছাড়া, যাদের কিডনি সমস্যা রয়েছে তাদের ক্ষেত্রেও সতর্ক থাকা প্রয়োজন। তরমুজে পটাসিয়ামের মাত্রা বেশি থাকা এটি কিডনি রোগীদের জন্য অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করতে পারে। খুব অল্প সংখ্যক মানুষের ক্ষেত্রে তরমুজে অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। যেমন-ত্বকে চুলকানি, ফুসকুড়ি বা হালকা জ্বালা।
আরও দেখুনঃ