টক দই আমাদের দেশে ভীষণ জনপ্রিয় আর পরিচিত একটি খাবার। কেননা টক দই খাওয়ার উপকারিতা অনেক। ছোট থেকে বড় সবাই দই খেতে পছন্দ করে। গরুর দুধকে প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া দিয়ে গাঁজন করে দই তৈরি করা হয়। দুধের তুলনায় দই হজম সহজ করে এবং শরীরের জন্য পুষ্টিগুণেও ভালো কাজ করে। গ্রাম থেকে শুরু করে শহর পর্যন্ত প্রায় সব জায়গাতেই দই খাওয়ার প্রচলন আছে। এখনো অনেকেই ভাতের সঙ্গে কিংবা মিষ্টি হিসেবেও দই খেয়ে থাকেন।
নিয়মিত টক দই খেলে হজমশক্তি ভালো হয় এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। তবে যেকোনো খাবারের মতোই টক দইয়েরও কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। অতিরিক্ত পরিমানে টক দই খেলে অ্যাসিডিটি, ডায়রিয়া বা অস্বস্তি হতে পারে। তাই স্বাভাবিক পরিমাণে দই খাওয়া উচিত। আজকের পোস্টে আমরা বিস্তারিত জানবো টক দইয়ের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা, ক্ষতিকর দিক এবং বাজারদাম সম্পর্কে।
টক দই এর পুষ্টিগুণ
টক দই শুধু খেতেই সুস্বাদু নয় এতে অনেক পুষ্টিগুণ বিদ্যমান রয়েছে। এতে রয়েছে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম এবং ভিটামিন B2 ও B12। টক দই এর পুষ্টিগুণগুলো শরীরের হাড় ও দাঁত মজবুত করে। এটি শরীরে শক্তি যোগায় এবং হজমশক্তি ঠিক রাখতে সহায়তা করে। নিয়মিত দই খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়।
এছাড়াও দই প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ হওয়ায় হজম প্রক্রিয়াকে সহজ করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য বা পেট ফাঁপা কমায়। দইতে থাকা প্রোটিন শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য অনেক উপকারী। এটি চুল ও ত্বক ভালো রাখতেও সাহায্য করে। দইয়ের ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস হাড় ও দাঁতের ঘনত্ব বজায় রাখে। দই অস্টিওপরোসিসের ঝুঁকি কমাতেও সাহায্য করে।
টক দই খাওয়ার উপকারিতা
টক দই নিওমিত খেলে শরীরে বিভিন্ন ধরনের উপকার পাওয়া যায়। নিয়মিত খাওয়ার ফলে শুধু হজমশক্তিই বাড়ে না, বরং হাড়, দাঁত, ত্বক ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও ভালো থাকে। নিচে টক দই এর ৭ টি গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা তুলে ধরা হলোঃ
১. হজমশক্তি বৃদ্ধি করে
টক দই খেলে পেটে উপকারি ব্যাকটেরিয়া বাড়ে। এতে কোষ্ঠকাঠিন্য, গ্যাস আর পেট ফাঁপার সমস্যা কমে যায় ফলে হজম সহজ হয়।
২. হাড় ও দাঁত মজবুত করে
টক দইয়ে ক্যালসিয়াম আর ফসফরাস থাকে, যা হাড়কে অনেক মজবুত করে। এটি দাঁত শক্ত রাখে আর বয়স হলে হাড় ভাঙার ঝুঁকি কমায়।
৩. হার্টের জন্য ভালো
বর্তমানে অনেকের ক্ষেত্রেই হার্টের সমস্যা দেখা যায়। টক দই খেলে শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে। যার কারণে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায়।
৪. ওজন কমাতে সহায়ক
টক দইয়ে প্রোটিন অনেক বেশি থাকে। তাই এটি খেলে অনেকক্ষণ পেট ভরা থাকে, ক্ষুধা কম লাগে আর ওজনও নিয়ন্ত্রণে থাকে।
৫. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
দইয়ে থাকা ভালো ব্যাকটেরিয়া শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। যার ফলে বিভিন্ন ভাইরাস ও সংক্রমণ শরীরের তেমন কোন ক্ষতি করতে পারেনা।
৬. চুল ও ত্বকের যত্নে উপকারী
টক দই খেলে চুলের গোড়া শক্ত হয় এবং চুল পড়া কমে যায়। দই খেলে ত্বকের উজ্জ্বল ঠিক থাকে। নিয়মিত খেলে ত্বক আর চুল দুটোই ভালো থাকে।
৭. রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে
টক দই খেলে শরীর কার্বোহাইড্রেট আস্তে আস্তে হজম করে। এতে রক্তে চিনির পরিমাণ কম বাড়ে যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ভালো।
গর্ভাবস্থায় টক দই খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভবতী মায়ের জন্য টক দই খাওয়ার উপকারিতা অনেক। পরিমাণমতো খেলে শরীর ও শিশুর জন্য বিভিন্ন রকমের উপকার পাওয়া যায় ।
- হজমশক্তি ভালো রাখে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য কমায়
- হাড় ও দাঁত মজবুত করতে সহায়তা করে
- ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করে
- সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা দেয়।
- গরমকালে শরীর ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে
তবে গর্ভাবস্থায় দই সীমিত পরিমাণে খেতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলতে হবে।
টক দই এর ক্ষতিকর দিক
টক দই স্বাভাবিক পরিমাণে খেলে উপকারী। কিন্তু বেশি খেলে শরীরের ক্ষতি করতে পারে। অতিরিক্ত খেলে এসিডিটি বা গ্যাস্ট্রিক সমস্যা হতে পারে। রাতে খেলে হজমে সমস্যা তৈরি হতে পারে। সর্দি বা কাশির সময় খেলে ঠান্ডাজনিত সমস্যা বাড়তে পারে। যারা ল্যাকটোজ সহ্য করতে পারে না তাদের দই খেলে ডায়রিয়া বা পেট খারাপ হতে পারে। তাই টক দই খাওয়ার সময় পরিমাণ মেনে খাওয়া উচিত।
টক দই দাম কত বাংলাদেশে
বাংলাদেশে টক দইয়ের দাম স্থান এবং ব্র্যান্ড অনুযায়ী ভিন্ন। গ্রামে খোলা দই প্রতি লিটার প্রায় ১৫০–১৮০ টাকা। শহরে ব্র্যান্ডেড টক দইয়ের দাম ৫০০ গ্রাম প্যাকেটের জন্য প্রায় ১০০–১১০ টাকা। আড়ং এর ১ কেজি প্যাকেটের দাম প্রায় ২০০–২১০ টাকা। সুপারশপ বা অনলাইন শপে দাম কিছুটা বেশি হতে পারে। সব মিলিয়ে টক দই তুলনামূলকভাবে সস্তা এবং সবার জন্য সাশ্রয়ী একটি স্বাস্থ্যকর খাবার।
আরও দেখুনঃ